বিষধর সাপ ‘ইয়েলো বেলিড’ বা ‘হলদে পেটি’। সামুদ্রিক এ সাপটি এখন বিচরণ করছে কক্সবাজার সৈকতে। গত শুক্রবার রাতে শহরের সমিতিপাড়া সৈকত পয়েন্টে দেখা মিলেছে এ প্রজাতির বিষধর সাপের।
এর আগে গত জুন মাসেও শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি ইয়েলো বেলিড সাপের দেখা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে কক্সবাজার সৈকতে এই ইয়েলো বেলিড সাপের বিচরণ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ধরনের সাপ নিয়ে গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সৈকতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিঘা সৈকতটি বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলের ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত। ভারতে এই সাপের প্রতিষেধক বা এন্টিভেনম না থাকায় এ সাপের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বীচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সমিতিপাড়া সৈকত পয়েন্টে দায়িত্ব পালনকালে তিনি একটি ইয়েলো বেলিড সাপের দেখা পান। পরে সাপটিকে সাগরের দিকে চলে যেতে দেখেন। এ সময় তিনি সাপটির ভিডিও ফুটেজ ও কিছু ছবি তুলে রাখেন।
তিনি বলেন, এর আগে গত জুন মাসেও শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি ইয়েলো বেলিড সাপের দেখা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে কক্সবাজার সৈকতে এই সাপের বিচরণ দেখা গেলেও কাউকে আক্রমণ করার খবর পাওয়া যায়নি।
সূত্রের তথ্যমতে, ‘ইয়েলো বেলিড’ সাপ বিশ্বের ৮টি ভয়ংকর সামুদ্রিক সাপের মধ্যে অন্যতম। এই সাপের দংশনে মৃত্যুর হার ৮০ ভাগ।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের সংক্রামক ব্যাধি ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাহান নাজির জানান, কক্সবাজারে এই সাপের আক্রমণে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও প্রায় ৬ মাস আগে দুবলার চর সৈকতে এক জেলের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুবলার চর সৈকতের ওই জেলে সাপটিকে মৃত ভেবে লাথি মেরেছিল। ফলে সাপটি ওই জেলেকে আক্রমণ করে বসে। এমনিতে কোনো সাপ কাউকে আক্রমণ করে না।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে ও কক্সবাজার সৈকতে এই ইয়েলো বেলিড সাপের বিচরণ রয়েছে। এর কামড়ে শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। কিডনি, হার্ট আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। প্রস্রাবের রঙও পাল্টে যেতে পারে। তাই এই সাপের ব্যাপারে জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হলদে পেটি সামুদ্রিক সাপ হলো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দেখা পাওয়া সামুদ্রিক সাপ। এটি অত্যন্ত বিষাক্ত প্রজাতির সাপ, যা হাইড্রোফিনি (সামুদ্রিক সাপ) সাবফ্যামিলির অন্তর্গত। হলদে পেটি সামুদ্রিক সাপের বৈজ্ঞানিক নাম পেলামিস প্লেটোরাস। স্বতন্ত্র দ্বি-বর্ণ প্যাটার্নের এই সাপটি আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, বাজা ক্যালিফোর্নিয়া এবং মধ্য আমেরিকার উপকূলসহ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় জলে পাওয়া যায়।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক ইয়েলো বেলিড সাপের গড় দৈর্ঘ্য ৩ ফুট। সাপটির একটি মসৃণ আঁশ এবং একটি মসৃণ আকৃতির শরীর রয়েছে। এর নিচের অংশ হলুদ এবং পিঠ নীলচে কালো এবং লেজ নৌকার দাড়ের মতো চ্যাপ্টা হলুদ পুচ্ছ বিশিষ্ট, যাতে সাপটি সাগরে নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটতে পারে। আইইউসিএন রেড লিস্টে সাপটির অবস্থান লিস্ট কনসার্ন বা ‘ন্যূনতম উদ্বেগ’ হিসেবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, ইয়েলো বেলিড সাপ শুধুমাত্র মাছ খায়। এরা পানির নিচে একটানা ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাটাতে পারে। এর সমগ্র জীবনচক্র সমুদ্রেই কাটে। এই প্রজাতির সাপ পানির উপরে ডাইভিং ও সাঁতার কাটার সময় ত্বকের মাধ্যমে তার চাহিদার ৩৩% পর্যন্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত প্রজাতির সাপ। তাই এই সাপের ব্যাপারে সতর্কতা আবশ্যক।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
Aninda, Sub-Editor