একটি মেয়ের গল্প

গল্পের শুরুটা ১৯৮৬ সালে। ৬/৭ বছরের একটি বালিকার একদিন ভোর ৩/৪ টার দিকে তার গুরু গম্ভীর বাবার শিশু শুলভ উচ্ছাস প্রকাশ আর সাথে পরিবারের ও পাড়া প্রতিবেশীদের মুহুর্মুহু করতালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়।

বাবার সেই শিশু শুলভ আনন্দ উদ্‌যাপনের কারন অনুসন্ধান করতে থাকে। সে দেখে সবাই বোকা বাক্সের দিকে তাকিয়ে। সেদিকে তাকাতেই মেয়েটি দেখতে পায় একজন মানুষ একটা বল নিয়ে দ্রুত ছুটে চলেছে । বেশ কজন কে কাটিয়ে মানুষটি সোজা বল জালে জড়িয়ে দিল। আবারও সবাই বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাসে ফেঁটে পড়লো।

মেয়েটিও সামিল হল সেই আনন্দে , তার বাবা ও পরিবারের সাথে। এভাবেই মেয়েটি ভিন্ন এক দেশের একটি ফুটবল টিমের কঠিন প্রেমে পরে গেল। দেশটির নাম আর্জেন্টিনা, আর হ্যাঁ, মেয়েটি আমি।

তারপর আসলো ১৯৯০ সাল। তখন আমি কিশোরী। আর্জেন্টিনার জন্য ভালোবাসা তখন বেড়ে কয়েকগুন  হয়েছে ততোদিনে। ১৯৯০ সালে স্বপ্নের ট্রফিটি অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল। শুরু হলো মন ভাঙ্গার এক ভিন্ন অধ্যায়। ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০ সেই মন ভাঙ্গার , স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো।

২০১৪ তে আবারও ১৯৯০ এর পুনরাবৃত্তি । এখন আমার গল্পের সঙ্গী আমার বড় ছেলে। মায়ের উচ্ছ্বাস সংক্রামিত হয়েছে সন্তানে। ঠিক যেমন আমার বেলায় হয়েছিল বাবার মাধ্যমে। মায়ের খুব ইচ্ছে ছেলের সাথে স্বপ্ন পূরনের আনন্দ ভাগ করার। মা যে সঠিক দল টি কেই ভালবাসতে শিখিয়েছে সেটি প্রমান করার ছিল। ( ছোট ছেলে ফুফাতো ভাইয়ের পথ অনুসরন করে হয়েছে জার্মানির ফ্যান )

বারবার স্বপ্ন ভেঙে দেয়ার কারনে কষ্টে, অভিমানে প্রায়ই চুপ থেকেছি। নিন্দুকেরা কথার বাক্যবানে জর্জরিত করতে চেয়েছিল। পণ করেছিলাম , চুপই থাকবো। ট্রফি না ছোঁয়া পর্যন্ত কোন সেলিব্রেশন না!

কারন অযথা কথা বলে লাভ নেই।আমার এবং আমার মতো কোটি কোটি ভক্তের হয়ে জবাব টা একদিন আমাদের প্রিয় দল মাঠেই দিয়ে দেবে। অপেক্ষায় ছিলাম…..

৩৬ বছর ৮ টি বিশ্বকাপ শেষে অবশেষে সেই অপেক্ষার সমাপ্তি হলো ১৮ ডিসেম্বর , ২০২২ এ এসে।
মেসি নামের এক রাজপুত্রের সিংহাসনে আরোহণের দিন।

ধন্যবাদ মেসি এন্ড কোং। বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ তাদের মেন্টর লিওনেল স্কলনি কে ।

ম্যারাডোনা নিশ্চয়ই উপরে বসে বাচ্চাদের মতো আনন্দ করছে। ওপারে ভালো থেকো তুমি মেরাডোনা।

লেখা- শম্পা জামান