ত্বক নিয়ে কি আর চিন্তার শেষ আছে! সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে আয়োজনেরও কমতি নেই। কিন্তু ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে ভুল করে ভুলের পরিমাণটাও কম হয় না কিন্তু! আর এই ভুলের কারণেই হাজারো যত্ন নেয়ার পর ত্বকের অবস্থা যেমনটা ঠিক তেমনই থেকে যায়।

অনেকসময় আবার অবস্থা বেশ করুণও হয়ে যায়! ত্বকের যত্ন নেয়া মানে যে শুধু বিভিন্ন উপাদান দিয়ে ত্বকে ঘষামাজা করা, তা নয়। ত্বককে ভালো রাখতে ব্যালেন্সড ডায়েট বা সঠিক খাদ্যাভ্যাস, আশেপাশের পরিবেশ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি- সবই বিবেচনায় আনা চাই। এই বিষয়গুলো যে সবারই কম-বেশি জানা আছে। তবুও হেলায় ত্বকের বারোটা যেন বেজেই যায় এই ব্যস্তজীবনে। ত্বক সুন্দর থাকলে আপনি সুন্দর ও স্নিগ্ধ থাকেন, তাই মন ও চারপাশের সবকিছুও ভালো লাগে। তাই ত্বককে সুন্দর, মসৃণ, সতেজ ও লাবণ্যময়ী রাখতে কিছু ভুল করা একেবারেই মানা!

অসাধারণ ত্বকের জন্য যা করতে ভুলবেন না

মডেলঃ শম্পা জামান

সানস্ক্রিন: সূর্যের প্রখর তাপে ক্ষতি হতে পারে ত্বকের, বিশেষ করে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করা খুবই জরুরি। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন মেখে নেবেন। অন্তত এসপিএফ ৩০ মাত্রার সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। যদি বাইরে একটানা থাকার প্রয়োজন হয়, তবে ২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর নতুন করে সানস্ক্রিন লোশন মাখতে হবে।

মেকআপ না তুলেই ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস
রাতের কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠান থাকলে তো কোনো কথাই নেই! কাপড়টা কোনোরকম বদলাতেই বিছানায় গিয়ে ঘুম! আর এই ভারি মেকআপ নিয়ে সারা রাত ঘুমানোর চাইতে ত্বকের বড় শত্রু নেই। সারা রাত থাকা এই মেকআপ ত্বকের লোমকূপে জমে থাকবে। এর ফলে ত্বকে র‍্যাশ, ব্রণ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই প্রথমে ভালো করে ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ রিমুভার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ভালোমতো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে প্রথমে টোনার এবং পরে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।

রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করতে হবে
আশেপাশে পরিবেশের অবস্থা বিবেচনা করে নিশ্চয়ই দূষণের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই দূষণের সব থেকে নিকৃষ্ট শিকার হলো ত্বক। বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার না করলে তার প্রভাবটা থেকে যায়। আর ত্বকের সেই জমে থাকা ময়লা নিয়েই রাতে ঘুমিয়ে গেলে ধীরে ধীরে ত্বকের বিপর্যয় ঘটে। খুব চট করেই এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তাই বাইরে থেকে এসে তো বটেই, রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও অবশ্যই ত্বক ভালোমতো পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।

ত্বকে চাই আলতো হাতের যত্ন
এক্সফোলিয়েটিং ও ক্লিনজিং শব্দ দুটোর সাথে নিশ্চয়ই পরিচিতি আছে। এই দুটোর ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য কোনোটিই অতিরিক্ত ভালো নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ত্বকে এক্সফোলিয়েট করা হলে ত্বক যদি স্বাভাবিকভাবে সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল না-ও থাকে, তবে এর কারণে হয়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে র‍্যাশ হয় এবং ত্বক রুক্ষও হয়ে যায়। আবার ত্বক পরিষ্কার করতে গিয়ে অতিরিক্ত জোরে ত্বকে ঘষামাজা করা ঠিক না। এতে করে ত্বক রুক্ষ হয়ে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ত্বক পরিষ্কার রাখা ভালো। প্রতিদিন সকালে (অথবা গোসলের সময়) ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক পরিষ্কার করুন এবং সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন।

shompa zaman enewsup

 

ক্লিনজিং অয়েল এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো!
শুনে হয়তো বা মনে করতে পারেন যে, সব ধরনের ত্বকের জন্য ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করা তো একেবারেই বোকামির কাজ। তা-ও আবার যদি হয় তৈলাক্ত ত্বক, যা সহজেই যেকোনো কিছুতে প্রতিক্রিয়া ঘটায়! ক্লিনজিং অয়েল মূলত লোমকূপ পরিষ্কার করে, যার পর ত্বকে কোনো ধরনের ময়লার অবশিষ্টাংশ থাকে না। শুধু একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার, ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত অন্য যেকোনো প্রোডাক্টের মতো এটিও অতিরিক্ত ব্যবহার ঠিক নয়। শুকনো ত্বকে শুকনো হাতে তিন ফোঁটা ক্লিনজিং অয়েল নিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

গলা ও ঘাড় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে শুধুমাত্র মুখের ত্বকের যত্নই নেয়া হয়। ঘাড় বা গলার যত্ন খুব বেশি একটা নেয়া হয় না বললেই চলে। মেকআপ করার সময় মুখের সাথে সাথে কিন্তু গলায়, আবার জামা-কাপড় ভেদে ঘাড়েও ফাউন্ডেশন দেয়া হয়। আর মুখের মেকআপের মতোই ঘাড়ের ও গলার মেকআপ তোলাটা জরুরি। তবে ঘাড় ও গলার মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে ক্লিনজিং ওয়াইপ ব্যবহার করা ভালো। এতে করে খুব সহজেই মেকআপ তুলে নেয়া যায়। তবে ত্বকের রকমভেদে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্লিনজিং ওয়াইপ পাওয়া যায়। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী যেটা শ্রেয়, সেই ক্লিনজিং ওয়াইপ ব্যবহার করবেন।

ময়শ্চারাইজার

ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে যেমন কোষের ক্ষতি হয়, তেমনই বেড়ে যায় জীবাণু সংক্রমণ কিংবা ব্রণের মতো সমস্যা। দেখা দিতে পারে ক্ষত ও চুলকানিও। তাই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তবে কোন ধরনের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করবেন তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ত্বকে তেলের পরিমাণ কেমন তার ওপর ভিত্তি করে বাছতে হবে ময়শ্চারাইজার। ত্বকের তেলের পরিমাণ বেশি থাকলে, ক্রিমের বদলে লোশন ব্যবহার করাই ভালো। আবার ত্বক শুষ্ক হলে সাধারণত ক্রিম জাতীয় ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন রূপ বিশেষজ্ঞরা।

জামান ইনিউজআপ

খাওয়াদাওয়া

শুধু নানা রকমের প্রসাধনী ব্যবহার করলেই চলবে না। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণ পানি। বিশেষ করে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল খেতে হবে বেশি করে। এতে ত্বকের কোষ থাকবে সজীব এবং ঝলমলে দেখাবে ত্বক।

তথ্যসূত্রঃ সংকলিত