গ্রীষ্মের কাঠফাটা অসহ্য গরমে সবার কাহিল অবস্থা। এ সময় বৃষ্টি হলে আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে যেত। কিন্তু, বৃষ্টির আশায় তো আর বসে থাকা যায় না। বাতাসে উষ্ণতা বাড়লে জলীয় বাষ্প কমে যায়।
এতে ত্বকে টান পড়ে ত্বক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সূর্যের তাপ এবং ধুলাবালুর কারণে এ সময়ে ত্বকের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্নের।
গরম ত্বকের যত্নে সৌন্দর্য্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে সাজানো হয়েছে আজকের লেখাটি।
ত্বক পরিষ্কার
সর্ব প্রথম ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য ভালো কোয়ালিটির ফেসওয়াস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত: দুই দিন ঘরে তৈরি প্যাক লাগাতে হবে। এতে করে ত্বকের ভেতরের ময়লা দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
পানি পান
এই গরমে ত্বক সুন্দর রাখতে পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। পানির অভাবে চামড়া খসখসে ও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই নিয়মিত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পানে ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ। ভাবছেন এতে নতুনত্বের কি আছে? ভুলে যান দিনে অন্তত আট গ্লাস পানি পানের ফর্মুলা। যতটুকু পানি পান করলে তৃষ্ণা নিবারণ হয় ততটুকু পানি পান করাই যথেষ্ট।
ময়েশ্চারাইজার
নিয়মিত ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
সানস্ক্রিন ক্রিম
শীতের সূর্যের তাপ আরামদায়ক লাগলেও গরমে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি বা অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। স্ক্রিন ক্যানসারের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে এই রশ্মিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গরমে বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করাটা অপরিহার্য। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে খুব ভালো করে সানস্ক্রিন ক্রিম ত্বকে লাগাতে হবে। আবহাওয়া এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী p/h দেখে ভালো মানের সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন কিনুন।
স্ক্র্যাব (scrub)
চিনি, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল দিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। এবার কিছুক্ষণ এই মিশ্রণ দিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। চালের গুঁড়াও স্ক্র্যাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ত্বকে স্ক্র্যাব ব্যবহার করুন।
হাত, পায়ের যত্ন নিন
গরমে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরে হাত, পা দুটোকে একটু স্বস্তি দিতে পাতিলেবুর রস দেয়া বরফপানিতে দুটো পেপার টাওয়েল হাত-পায়ে জড়িয়ে রাখুন। দেখবেন আরামের সঙ্গে সঙ্গে পায়ের ঘামের দুর্গন্ধও দূর হবে।
দেহে ঘাম জমে ঘামাচি হতে পারে, দিনে দুইবার গোসল করুন
সুতি পোশাক ব্যবহার করুন। রোদে বেরুলেই সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করুন।
খাদ্য তালিকায় রাখুন শাকসবজি, ফলমূল
এ সময় নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল ও শাকসবজি।
গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বি জাতীয় খাবার শরীর আরো উত্তাপ লাভ করবে, ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চর্বির সাথে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক।
অ্যাজমা রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে
শীতের ফুলের পরাগরেনু ও ধূলাবালি থেকে যেমন এ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হয়, তেমনি অসহনীয় গরমের কারণে অ্যাজমার সমস্যা তীব্র হতে পারে। এ অবস্থায় অ্যাজমা রোগীরা যাতে গরমের অস্বস্তিকর পরিবেশের মুখোমুখি না হন, সে ব্যবস্থা তাদের নিজেদের গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের দেয়া চিকিৎসা নিয়মিতভাবে গ্রহণ করতে হবে, মেনে চলতে হবে উপদেশগুলো। হাতের কাছে ইনহেলারটি রাখার কারণে স্বস্তি পেতে পারেন।
আরো যা যা করতে পারেন
নিমপাতার রস: যাদের ত্বকে ঘামাচি হয়, তারা গরমে ত্বকের যত্ন নিতে নিমপাতার রস লাগালে উপকার পাবেন। তেঁতো জাতীয় খাবার খান। ঘাম বেশি হলে ট্যালকম পাউডারের সাথে এক চিমটি খাবার সোডা ব্যবহার করুন।
শসার প্যাক: গরমে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই রূপচর্চা করা জরুরী। ত্বক তৈলাক্ত হলে বার বার মুখ পরিষ্কার করতে হবে। শসা বাটা এবং মসুরের ডাল বাটা দুটো পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনার মুখের তেলতেলে ভাব কেটে যাবে।
ক্রিম: শুষ্ক ত্বকের খসখসাভাব দূর করার জন্য এবং বলিরেখা পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবসময় ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। অবশ্য ক্রিম-এর বদলে বেবি লোশনও ব্যবহার করতে পারেন। তবে গরমের দিনে ক্রিম হতে হবে তেলবিহীন। নতুবা ক্রিম-এর অতিরিক্ত তেল গরমে আরো বেশি সমস্যা তৈরি করবে।
এছাড়াও আরো যা করণীয়:
১. গরমের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পানি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বককে সজীব রাখে।
২. গরমের দিনে সকালে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক পরিস্কার করুন। পারলে সারাদিন বারবার মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩. অনেকে শীতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও গরমে বন্ধ করে দেন যা একদম ঠিক নয়। ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি ত্বককে নরম রাখে।
৪. গরমের দিনে ত্বককে শীতল রাখা খুবই প্রয়োজন। এক টেবিল চামচ কোরানো শসার সঙ্গে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৫. গরমের সময় ত্বকে ধূলাবালি জমে।এজন্য চার-পাঁচ চামচ বেসনের সঙ্গে এক চামচ হলুদ, পাঁচ-ছয় ফোঁটা গোলাপজল ও দুধ মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা পর ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। এতে ত্বক অনেক উজ্জ্বল দেখাবে।
৬. এ সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, এ জন্য গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। টক, ভাজাপোড়া এবং খুব বেশি গরম খাবার খাবেন না।
৭. পঁচাবাসি খাবার এড়িয়ে চলুন।
৮. রোদে বের হবার আগে সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না যেন। সানগ্লাস আপনার চোখকে রোদ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আপনার মধ্যে একটা স্মার্ট লুক নিয়ে আসবে।
৯. বাইরে যেহেতু ঘন ঘন মুখ ধোয়া সম্ভব নয়, তাই সঙ্গে ফেসিয়াল টিস্যু রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলে নিজেকে অনেক ফ্রেশ ও সতেজ মনে হবে।
১০. গরমে লেবুর শরবত হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এক চমৎকার পানীয়। শরবতে একটু লবণ ও চিনি মিশিয়ে নিন। চিনি শক্তি জোগাবে, আর লবণ পূরণ করবে আপনার শরীর থেকে ঘামের সাথে বেরিয়ে যাওয়া লবণের অভাবটুকু। লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। এই গরমে ভিটামিন সি ফিরিয়ে দেবে আপনার লাবণ্যতা।
গরমের করুন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন আপনার অভ্যাসের পরিবর্তন। নিজেকে বদলে ফেলুন। ত্বকের প্রতি দৃষ্টিদিন। সামান্য কিছু সতর্কতা আপনার ত্বককে করবে আরও বেশি আকর্ষণীয়।
চকচকে ও মসৃণ ত্বক, মানে মুখের ত্বক । কাঁচের মতো ঝকঝকে ত্বক!
তথ্যসূত্রঃ সংকলিত
Aninda, Sub-Editor